আজ সোমবার, ১০ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৫শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

সেলিম ওসমানকে পাল্টা চ্যালেঞ্জ

সংবাদচর্চা রিপোর্ট :

সাংসদ সেলিম ওসমানের হুঙ্কারকে পাত্তা না দিয়ে একরকম পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন বন্দর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থী মাকসুদ হোসেন। বরং সাংসদের হুঁশিয়ারী, হুঙ্কারের পর আরও ব্যাপকভাবে নির্বাচনী মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন চিহ্নিত রাজাবকার রিফক চেয়ারম্যানপুত্র মাকসুদ হোসেন। তার ছেলে ইতোমধ্যে যার ললাটে লেগেছে সন্ত্রাসী তকমা সেই শুভ গতকাল বিশাল হোন্ডা বাহিনী নিয়ে বীরদর্পে চালিয়েছেন নির্বাচনী প্রচারণা।
শনিবার সাংসদ সেলিম ওসমান মাকসুদ হোসেনকে ‘রাজাকারপুত্র’ উল্লেখ্য করে কড়া সমালোচনা করে বক্তব্য রাখেন। এক পর্যায়ে তাকে ক্ষমা চেয়ে ঘরের ছেলে উল্লেখ্য করে ঘরে ফিরে আসারও আহ্বন করেন। সেই সঙ্গে কথা না শুনলে কীভাবে মুগুর মারতে হয় তা তিনি ভালো করেই জানেন বলে সরাসরি হুমকি দিয়ে বক্তব্য রেখেছিলেন। কিন্তু তার সেই হুমকি এবং আহ্বান কোনোটাকেই পাত্তা দেয়নি মাকসুদ হোসেন। বরং এমন হুমকির পরদিন উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা নিশ্চিত করতে মুছাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন মাকসুদ হোসেন। এরমধ্য দিয়ে মাকসুদ হোসেন সেলিম ওসমানকে পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
তারা বলছেন, কথায় আছে, ‘আমার বিলাই আমারে কয় ম্যাও’। মাকসুদ হোসেন ছিলেন সেলিম ওসমানের আস্থাভাজন। চিহ্নিত রাজাকার পরিবারের সন্তান হওয়ার পরও ওসমান পরিবারের ছত্রচ্ছায়াতে বিগত পনের বছর যাবত মাকসুদ হোসেন ও তার পরিবার ফুলেফেঁপে মোটাতাজা হয়েছেন। বিপুল পরিমাণের ধন-সম্পদের মালিক হয়েছেন। পাশাপাশি স্থানীয় পর্যায়ে ব্যাপক প্রভাব প্রতিষ্ঠিত করেছেন। যাদের ছায়ায় মাকসুদের প্রভাব প্রতিপত্তি সেই তাদেরকেই এবার তিনি পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
এদিকে মাকসুদ যে সেলিম ওসমানকে পাত্তা দিচ্ছেন তা গেল বেশ কিছুদিন আগেই তিনি প্রমাণ দিয়েছিলেন। নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পূর্বে সেলিম ওসমানসহ তার পরিবারের অন্যান্যদের ছবি সম্বলিত ব্যানার করায় ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন সেলিম ওসমান। সেসময় তিনি মাকসুদকে ছবি ব্যবহার না করার জন্য নিষেধ করেছিলেন। এমনকী হুমকিও দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই নিষেধ, হুমকি মোটেও আমলে নেয়নি মাকসুদ হোসেন। তিনি যথা রীতি সেলিম ওসমান, শামীম ওসমান এবং জাতির জনক ও তার কন্যার ছবি ব্যানারে ব্যবহার করে নির্বাচনী বৈঠক চালিয়ে গিয়েছিলেন।
এদিকে সর্বশেষ শনিবার ধামগড়ে এক সভা থেকে সাংসদ সেলিম ওসমান মাকসুদ হোসেনকে রাজাকার সন্তান বলে আখ্যায়িত করেন। তিনি তাকে হুমকি দিয়ে বলেছিলেন, ‘রশিদ ভাই নির্বাচন করতে চায়নি। আমি উনাকে বলেছি আপনি যদি নির্বাচন না করেন তাহলে আমি এমপি পদ থেকে পদত্যাগ করবো। কারন আমি কোনো রাজাকার সন্তানের সাথে বসতে পারবো না।’
তিনি আরও বলেছিলেন, ‘একটি ইউনিয়নে আমি নতুন চেয়ারম্যান খোঁজার চেষ্টা করছি। দুইজন আমার অমতে নির্বাচন করার চিন্তা ভাবনা করছে। একজন হলো আমি বলিনা তিনি নিজেই বলেন রাজাকারের সন্তান। উনি প্রমাণ করে দিয়েছেন উনি রাজাকারের সন্তান। আমি কখনো এমন ভাবি নাই। আমি বলেছি মানুষের জন্য কাজ করো আগের বাপ দাদার পাপ ভুলে যাও। পাপে বাপেরেও ছাড়ে না। মাকসুদ সাহেব এতোগুলো মানুষের সামনে আবারও আপনাকে বললাম আল্লাহর কাছে মাফ চেয়ে আপনার দায়িত্বে ফিরে আসেন। আমি আপনাকে কিছু বলবো না। তবে মনে রাখবেন আমরা মুক্তিযোদ্ধা। যদি ভাল ভাল কথা শুনেন তো শুনবেন। না হলে মুগুর কিভাবে বানাতে হয় আমার জানা আছে। আমি বললাম আপনি আগামীকাল থেকেই উইড্র্রো করেন।’
তবে, মাকসুদ হোসেন নির্বাচনী মাঠ থেকে নিজেকে সরিয়ে নেওয়াতো দূরের কথা। বরং তিনি উপজেলা নির্বাচনে নিজের প্রার্থীতা নিশ্চিত করতে চেয়ারম্যান পদ থেকেও পদত্যাগ করেছেন। গতকাল তিনি বন্দর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে তার পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। একই সঙ্গে অন্যান্য দিনের তুলনায় গতকাল মাকসুদ হোসেন ও তার লোকজন প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছেন অত্যন্ত জোড়ালোভাবে। প্রায় ত্রিশ থেকে চল্লিশটি হোন্ডা এবং চার পাঁচটি মাইক্রোতে করে মাকসুদ হোসেনের ছেলে শুভর নেতৃত্বে চলা প্রচারণা সবার নজর কাড়ে। এতে করে স্থানীয়রা বলছেন, মাকসুদের পুরো শরীর জুড়েই কলিজা। তা না হলে সেলিম ওসমানের অমন হুঙ্কারের পর তিনি নির্বাচনী মাঠ থেকে সরে আসতেন।
অপরদিকে উল্টো মাকসুদ হোসেন নিজেই হুমকি ধামকির ব্যাপারে বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বলে বেড়াচ্ছেন কারো হুমকি ধামকিতে ভয় পাবেন না। সেই সাথে তিনি বর্তমান এবং পূর্বের উপজেলা চেয়ারম্যানদের বিরুদ্ধেও বক্তব্য দিয়ে চলেছেন। পাশাপাশি গতকাল তার লোকজনের মুখে ‘যার সাথে নাই জনগণ, সেই চাই এমপির সমর্থন’ স্লোগানও শোনা গেছে।
এদিকে সেলিম ওসমান মাকসুদের উপর চটেছেন। এমন পরিস্থিতিতে তিনি এবার শামীম ওসমানকে ম্যানেজ করার মিশনে মাঠে নেমেছেন বলেও শোনা যাচ্ছে। ফলে শেষপর্যন্ত যদি তিনি শামীম ওসমানকে ম্যানেজ করেই ফেলেন তাহলে ওসমান পরিবারের মধ্যে গৃহবিবাদ সৃষ্টির হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এখন দেখা পালা, মাকসুদ শামীম ওসমানকে ম্যানেজ করে তার শেল্টার আদায় করতে পারেন কিনা। যদিও মাকসুদ সবাইকে ম্যানেজ করেই নিজের স্বার্থ হাসিলে খুবই অভিজ্ঞ।
মুক্তিযুদ্ধের সময় মাকসুদের দাদা, বাবা ও চাচারা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সদস্যদের সাথে হাত মিলিয়ে মানবতা বিরোধী অত্যাচার নির্যাতন করেছেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা যায়। বহু মানুষের বাড়িঘর আগুনে পুড়িয়েছেন তারা। সেই সঙ্গে হত্যা, লুটপাটের মতো জঘন্য অপারাধের অভিযোগও ছিল তাদের বিরুদ্ধে। এমনকী তার বাবা আদালতকর্তৃক সাজাভুক্ত একজন রাজাকার ছিলেন। এমন জঘন্য একটি পরিবারের সন্তানের হাতে সর্বশেষ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক তুলে দিয়েছিলেন ওসমান পরিবারের লোকজন।